আজ পাঁচ মে, শাপলা চত্বরের সেই ভয়াবহ রাত সবার চোখের সামনে আবার ভেসে উঠছে। বুকের সে ক্ষতটা যেন আবার তাজা হয়ে উঠেছে।
আজ আমি কোন কষ্টের কথা লিখবনা, শুধু একটি অনুভূতির কথা লিখব, অন্যরকম এক অনুভূতি !
কয়েক বছর আগে একবার রমজান মাসে তারাবীর পর আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরতে বের হলাম। হাটতে হাটতে একসময় সেহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে এসে পড়লাম। আমরা যখন রমনা কালী বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম,হঠাৎ দেখি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কিছু “বে-রসিক” সদস্য শক্তিশালী টর্চ লাইট নিয়ে পাশের এক জংলা মত জায়গায় হামলা চালালো! তো আমরা সবাই দাড়িয়ে বিনে পয়সায় সিনেমা দেখার মত দারুণ কিছু দৃশ্য দেখার অপেক্ষা করতে লাগলাম, এবং দেখতেও পেলাম!!
পুলিশের বাঁশির আওয়াজ এবং তীব্র আলোর আকর্ষনেই যেন প্রতিটি গাছের আড়াল থেকে জোড়ায় জোড়ায় নারী-পুরুষ বের হয়ে আসছে। কারো গায়ে দামী শার্ট কিন্তু পা খালি, আবার কারো এক পায়ে জুতো আছে কিন্তু আরেক পা খালি। কারো ওড়না আছে ঠিকই কিন্তু পুরোটাই ছেড়া! কারো আবার চোখের কাজল ঠোটে লেগে আছে আর ঠোটের লিপস্টিক সাথের পুরুষের গালে !
আমরা তন্ময় হয়ে এই অসাধারণ দৃশ্যগুলো দেখছিলাম এবং মনে মনে “পুলিশ” ভাইদের ধন্যবাদও দিচ্ছিলাম। যদিও ঘটনার শিকার পাত্র পাত্রীরা তাদেরকে গালিই দিচ্ছিল।
আজ শাপলা চত্বরের ঘটনার কারণে প্রচুর কষ্টের মাঝে থেকেও যখন এই ঘটনা মনে পড়ে গেল তখন অনেক হাসি পাচ্ছিল, আর মনে হচ্ছিল শাপলা চত্বরের ঘটনাই যদি শাহবাগে ঘটতো তাহলে বিষয়টা কেমন হত !
সেদিনের সেহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘঠনার মতো কিছু মজার মজার দৃশ্য আমরা দেখতে পেতাম, কল্পনা করুন তো, রাত দুটোর সময় যদি পুলিশ শাহবাগে হামলা করত তাহলে কি অবস্থা হত ? সেহরাওয়ার্দী উদ্যানে তো আর যাই হোক সবার গায়ে কাপড় চোপড় ছিল কিন্তু শাহবাগে ? অনেকগুলো বিবস্ত্র নারি পুরুষ ঢাকার রাজপথে দিকবিদিক ছুটছে, কেমন লাগবে দৃশ্যটা ?
শাপলা চত্বরের ঘটনার সময় তো সরকারের নির্দেশেই সরাসরি সম্প্রচারের দায়ে দুটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু একই ঘটনা যদি শাহবাগে ঘটতো তাহলে দেখা যেতো সবগুলো টিভি চ্যানেল আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যেত।
ভাগ্যিস হামলাটা শাহবাগে হয়নি, তাহলেতো বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের সামনে আমাদেরকেই লজ্জা পেতে হত। তাই শত দুঃখের মাঝেও এ কারণে পুলিশ “ভাই”দের কে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয় !!!
অনুভূতিশীলঃ মাহদী হাসান